নিউজ ডেস্ক : হিজড়ারা কি সমাজের অবিচ্ছেদ্দ অংশ, এরা কি দেশের নাগরিক নয়? সমাজের অংশ এবং দেশের নাগরিক হলে এদের জন্য কি আলাদা আইনের প্রয়োজন? যদি আলাদা আইনের প্রয়োজন না হয়, তা হলে হিজড়ারা অপরাধ করলেও বিচারের মুখো-মুখি হচ্ছে না কেন ?
ভাব-ভঙ্গিতে মেয়েলি ভাব, এরা হিজড়া। আমাদের দেশে জš§গত হিজড়ার চেয়ে কৃত্রিম বা বানানো হিজড়ার সংখ্যাই বেশি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে হিজড়ার সংখ্যা ৫০ হাজার। কৃত্রিম হিজড়া ২০ হাজার। একটি চক্র সরল সুন্দর সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির বারো তেরো বছরের ছেলেদের ফুসলিয়ে প্রতারণায় ফেলে নিয়ে যায়। হাসপাতাল ক্লিনিকে শিক্ষিত ডিগ্রিধারী ডাক্তারের মাধ্যমে পুরুষাঙ্গ কেটে, ওষুধ খাইয়ে আকৃতি বিকৃত করে, ইনজেকশন দিয়ে বা অপারেশন করে স্তন বড় করে এদের হিজড়ার খাতায় নাম লেখানো হয়। পরে চাঁদাবাজি, মাদকব্যবসা বা পতিতাবৃত্তির মতো জঘণ্য অপরাধে জড়িত হয় এরা। ইচ্ছে করলেও বাড়ি-ঘরে ফিরে যেতে পারে না। ফ্যামিলি এবং সমাজ থেকে দূরে থেকে যাচ্ছেতাই করে বেড়ায়। সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হিজড়াদের দাবি, সাধারণ মানুষের মতো কবর না দিয়ে পানিতে ভাসিয়ে বা মাটির গর্তে পুতে রাখা হয় তাদের। কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে নিয়োগ পায় না তারা।
দোকানিরা মাল বিক্রিতে অসম্মতি জানায় তাদের কাছে। চালকরা গাড়িতে উঠাতে চায় না। সমাজ তাদের কাছে ভিড়তে দেয় না। অনেক দুঃখ তাদের মনে।
শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম। সব মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে পবিত্র ইসলাম।
ইসলাম হিজড়াদের ওপর অবিচার করেনি। অন্যসব মানুষের মতো একজন মানুষ হিসেবে দেখেছে হিজড়াদের। পুরুষ হলে পুরুষের, নারী হলে নারীর বিধান মেনে চলতে হবে তাদের। একজন নারীর যেমন নামাজ, রোজা ও পর্দাসহ ইসলামের সব বিধান মানতে হয়, একজন নারী হিজড়াকেও এগুলো মেনে চলতে হয়। এভাবে পুরুষের মতো পুরুষ হিজড়াকেও। মৃত সাধারণ মানুষের মতো তাদেরও কাফন, দাফন ও জানাজা দিয়ে কবর দেয়ার হুকুম। মানুষ এগুলো মানে না বলেই তো তাদের এ করুণ অবস্থা।
একটি চক্র সুস্থ মানুষের অঙ্গহানি করে হিজড়া বানিয়ে ফেলছে। কেউ নিজের আগ্রহে হিজড়া হচ্ছে। ইসলামে অঙ্গহানি নাজায়েজ। মারাত্মক অপরাধ। কারও জটিল দূরারোগ্য ব্যথা হলেও ধার্মিক অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অঙ্গ কাটার কোনো সুযোগ ইসলাম দেয়নি। এছাড়া একজন সুস্থ মানুষের অঙ্গহানি করে অসুস্থ বানানো, সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা অমার্জনীয় অপরাধ। কঠোর হস্তে দমন করা উচিত।
চাঁদাবাজি, মাদক ও পতিতাবৃত্তির মতো জঘণ্য অপরাধে জড়িত দেখা যায় হিজড়াদের। হিজড়া বানানো বা হওয়ার লক্ষ্য কিন্তু ইনকাম। হিজড়াদের কোনো আইনি জটিলতা না থাকায় তারা অবাধে অপরাধ বিস্তার করে যাচ্ছে। রাস্তায় মানুষ ধরে বা দোকানে জবরদস্তি করে টাকা নেয়া এদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
পুরুষাঙ্গ কেটে সুস্থ মানুষকে হিজড়া বানানো হয় একথা শুনলে যে কেউই আঁতকে ওঠলেও মূলত: অভাব এবং অসচেতনতাই এ কাজকে তরান্বিত করেছে। মানুষের সম্মানের ভয় হিজড়াদের অপরাধ প্রবণতা বাড়িয়েছে। তারা যেখানে-সেখানে কাপড় উদাম করে ফেলে।
হিজড়াদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য প্রথমত হিজড়া প্রজননকেন্দ্র বন্ধ এবং এর কারিগর ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে এগুলো দমন করতে হবে। বিভিন্ন পত্রিকায় এবং টিভি চ্যানেলে এদের চিহ্নিতও করা হয়েছে। তাতে হিজড়া উৎপাদন বন্ধ হবে। আমাদের সবাইকে তাদের ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। আড় চোখে না দেখে একজন মানুষের মতো সুবিধা দিতে হবে। এছাড়া মৌলিক হিজড়াদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে স্থায়ী ব্যবস্থা নিলে হিজড়ারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবে বলে আশা করা যায়। কিছুদিন আগে শোনা গিয়েছিল, হিজরা বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য সরকার ট্রাফিক পুলিশে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও এখনও কার্যকর হতে দেখা যায়নি উদ্যোগটি।
হিজড়া, অসহায় এবং অভাবীদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে অপরাধ প্রবণতা কমবে। তারা স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবন লাভে ধন্য হবে।
লেখক : প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতুল বালাগ, ঢাকা। সূত্র : ইসলামি চিন্তার কাগজ, মাদরাসাতুল বালাগ, ঢাকা।